ব্যথাযুক্ত মাসিকের কারণসমূহ
বেশীরভাগ মাসিকের ব্যথা ঋতুস্রাবের একটি স্বাভাবিক অংশ এবং সাধারনত বাসায় এর চিকিৎসা করা যায়।
মাসিকের ব্যথা হয় যখন গর্ভের পেশীবহুল দেয়াল সংকুচিত হয়। খুব হালকা সংকোচন আপনার গর্ভের মধ্যে ঘটে, কিন্তু তারা এতই হালকা যে বেশিরভাগ মহিলা তাদের অনুভব করতে পারেনা। গর্ভের আস্তরনকে মাসিক চক্রের অংশ হিসেবে গর্ভাশয় থেকে খসিয়ে দিতে পিরিয়ডের সময় আপনার গর্ভের দেয়াল আরো বলিষ্ঠভাবে সংকুচিত হতে থাকে।
যখন আপনার গর্ভের পেশীবহুল অংশ সংকুচিত হয়, এটা রক্তনালী কে চাপ দেয় যা আপনার গর্ভের আস্তরন হিসেবে থাকে। এটি সাময়িকভাবে রক্তপ্রবাহকে বন্ধ করে দেয় এবং ফলশ্রুতিতে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অক্সিজেন ছাড়া, আপনার গর্ভের টিস্যুগুলো কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে যা আপনার ব্যথার সূত্রপাত ঘটায় । যখন আপনার শরীর এই ব্যথার সূত্রপাত ঘটানো রাসায়নিক বিমুক্ত করবে, তখন এটা অন্য আরেকটি রাসায়নিক মুক্ত করে যার নাম প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন। প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন গর্ভের মাংশপেশী কে উৎসাহিত করে আবারো সংকুচিত হওয়ার জন্য, অতএব ব্যথার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
এটা এখনো জানা যায়নি যে কেন কিছু মহিলা অন্যান্যদের থেকে বেশী ব্যথা অনুভব করে। ধারনা করা হয় যে কিছু মহিলা প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন বেশী তৈরী করতে পারে যার ফলে তাদের সংকোচন অন্যান্যদের তুলনায় বেশী শক্তিশালী হয়।
শারীরিক বিভিন্ন রোগ যার জন্যে মাসিকের সময় ব্যথার সৃষ্টি হতে পারেঃ
খুব কম ক্ষেত্রেই শারীরিক বিভিন্ন রোগের কারণে মাসিকের সময় ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। যেমনঃ
এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis): এই রোগে, যেসব কোষ সাধারনত গর্ভের আস্তরন হিসেবে থাকে তা শরীরের অন্যান্য জায়গায় ব্জন্মাতে শুরু করে, সাধারনত এটি ফেলোপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয়ে হয়ে থাকে। যখন এই কোষগুলো খসে যায় এবং পড়ে যায় তখন এটি তীব্র ব্যথার কারন হতে পারে।
ফাইব্রয়েডস: এই অবস্থা হয় যখন কিছু নন-ক্যান্সেরাস টিউমার গর্ভে সৃষ্টি হয়। তারা আপনার পিরিয়ড খুব ভারী এবং ব্যথাময় করতে পারে।
পেলভিক ইনফ্লেমেটরি রোগ: আপনার ডিম্বাশয়, ফেলোপিয়ান টিউব এবং গর্ভাশয় ব্যকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয় যা তাদেরকে গুরুতরভাবে সংক্রমিত করে (ফুলে যায় এবং যন্ত্রনা দেয়)।
এডেনোমায়োসিস(Adenomyosis): সাধারনত যে টিস্যুগুলো গর্ভের আস্তরনে জন্মে সেগুলো এই রোগে গর্ভের পেশীবহুল দেয়ালের ভিতরে জন্মাতে শুরু করে। এই অতিরিক্ত টিস্যুগুলো আপনার পিরিয়ডকে বিশেষভাবে ব্যথাময় করতে পারে।
ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস (IUD) – এটি জন্মনিয়ন্ত্রনের একটি পদ্ধতি যা কপার এবং প্লাস্টিক এর তৈরী। এটা কিছু কিছু সময় মাসিকের ব্যথার কারন হয়ে থাকে, বিশেষতঃ গর্ভাশয়ে এটিকে প্রবেশের পর প্রথম কয়েক মাস।
যদি আপনার ব্যথাময় মাসিক অন্তর্নিহিত কোন কারনে হয়ে থাকে, আপনার অন্যান্য কিছু উপসর্গ থাকতে পারে, যেমন,
- অনিয়মিত মাসিক
- মাসিকের মাঝে রক্তক্ষরন
- যোনি থেকে ঘন অথবা নোংরা-গন্ধযুক্ত স্রাব নিঃসরন
- যৌন মিলনের সময় ব্যথা
- আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রকমের মাসিকের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হন ৩০-৪৫ বছর বয়সী নারীরা।
উপরোক্ত কোন কারনে মাসিকের ব্যথা হয়ে থাকলে, সেটা স্বাভাবিক মাসিকের ব্যথার ধরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করে বোঝা যাবে। উদাহরনস্বরূপ, আপনি দেখতে পারেন আপনার মাসিক ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে অথবা এটা স্বাভাবিক এর থেকেও বেশী স্থায়ী হচ্ছে।
যদি আপনি স্বাভাবিক মাসিকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পান তবে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে উপসর্গগুলো নিয়ে আলাপ করে নিন।