শিশুরা তাদের নিরাপত্তার জন্য সম্পুর্নভাবে আপনার উপর নির্ভরশীল। তাদেরকে নিরাপদ রাখতে আপনি কি করতে পারেন তা জেনে নিন।
পড়ে যাওয়া রোধ করতে
বাচ্চারা খুব দ্রুত গা মোড়ানো ও লাথি মারা শিখে যায়। গড়িয়ে উপুড় হওয়া শিখতেও তাদের বেশি সময় লাগে না, যার অর্থ হচ্ছে তারা বিছানা অথবা অন্যকোন উঁচু জায়গা থেকে গড়িয়ে পড়ে যেতে পারে। হামাগুড়ি দিতে শেখার পর বাচ্চারা বিভিন্ন জিনিস (যেমন সোফা)- এর উপর চড়ার চেষ্টা করে, যে কারনে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এই অবস্থায় আপনি যা করতে পারেন তা হচ্ছেঃ
ন্যাপি বদলানোর সময় বাচ্চাকে মেঝেতে রাখুন।
কাউকে পাহারায় না রেখে বাচ্চাকে খাট, সোফা বা ন্যাপি বদলানোর টেবিলের উপর রেখে কোথাও যাবেন না, কারন সে গড়িয়ে পড়ে যেতে পারে।
বাচ্চাকে লাফানো দোলনা (bouncing cradle) বা খেলনা গাড়ির সিটে রেখে সেগুলো কোন উঁচু জায়গা (যেমনঃ টেবিল)-এর উপর রাখবেন না, কারন বাচ্চার নড়াচড়ার ফলে সেটি সেখান থেকে পড়ে যেতে পারে।
বাচ্চাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করার সময় রেলিং ধরে থাকুন, তাহলে হোঁচট খেলেও সামাল দিতে পারবেন।
বাচ্চাকে নিয়ে চলাফেরার সময় কোথায় পা ফেলছেন তা দেখে চলুন। অনেক সময় মেঝেতে পড়ে থাকা খেলনাতে পা হড়কে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বাচ্চাকে হাইচেয়ারে বসিয়ে রাখার সময় বিশেষ ধরনের সিটবেল্ট (five-point harness) ব্যবহার করুন।
যখন আপনার বাচ্চা হামাগুড়ি দেয়া শিখে যাবে তখনঃ
সিঁড়ির উপরে এবং নিচে গেট লাগিয়ে দিন যেন সে নিজে নিজে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা বা নামা শুরু করতে না পারে। গেট দুটি দিয়ে যাতায়াতের পর সেগুলো ভালোভাবে বন্ধ করে রাখুন।
যদি আপনার সিঁড়ি, বারান্দা বা ছাদের রেলিং-এ ২.৫ ইঞ্চির বেশি ফাঁকা জায়গা থাকে সেখানে বোর্ড, বা সেফটি নেট লাগিয়ে দিন। এগুলোতে বাচ্চার শরীর বা মাথা আটকে যেতে পারে।
নিচু ধরনের ফার্নিচার জানালার কাছ থেকে দূরে রাখুন। জানালায় ২.৫ ইঞ্চির বেশি ফাঁকা জায়গা থাকলে সেখানে সেফটি ক্যাচ বা লক লাগিয়ে দিন, যেন বাচ্চা জানালা দিয়ে বাইরে চলে যেতে না পারে। সেখানকার চাবি কোথায় রেখেছেন তা বাড়ির সব বড়দের জানিয়ে রাখুন, কারন আগুন লাগলে সেগুলো কাজে লাগবে।
আপনার বাচ্চাকে বেবি ওয়াকার (ছোট বাচ্চাদের হাঁটানোর জন্য ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের চাকালাগানো ফ্রেম)-এ করে নিয়ে হাঁটাবেন না। এগুলো বিপদজনক এবং মারাত্মক দুর্ঘটনার কারন হতে পারে।
শিশুর খাট থেকে খেলনা এবং খাটের চারপাশে রেলিঙ্গে লাগান বাম্পার সরিয়ে ফেলুন, কারন এগুলো বেয়ে বেয়ে বাচ্চা রেলিঙ্গের উপর উঠে যেতে পারে, পড়ে ব্যাথা পেতে পারে।
পুড়ে যাওয়া ও ছ্যাকা খাওয়া থেকে শিশুকে বাঁচাতে
বাচ্চাদের ত্বক বড়দের চাইতে অনেক পাতলা হয় এবং খুব সহজেই পুড়ে যেতে পারে। এ কারনে বাচ্চাকে গোসল করানোর সময় আপনাকে বাড়তি সাবধান হতে হবে।
শিশুরা উজ্জ্বল রঙের জিনিস (যেমনঃ মগ) ধরতে চায়। যদি আপনি মগে করে গরম কোন পানীয় খেতে থাকেন, তাহলে বাচ্চাকে কোলে নেয়ার আগে সেটি রেখে দিন।
ফিডারে দুধ বানানোর পর ফিডারের বোতলটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন, এবং কয়েক ফোঁটা দুধ আপনার হাতের তালুর নিচের কব্জিতে নিয়ে তার তাপমাত্রা পরিক্ষা করে নিন। দুধ হালকা গরম হওয়া উচিত, কখনই খুব বেশি গরম নয়।
শিশুর গলায় কিছু আটকে যাওয়া বা দম আটকে যাওয়া প্রতিরোধ করতে
বাচ্চাদের গলায় খুব সহজেই কোনকিছু (এমনকি দুধও) আটকে যেতে পারে। তারা খুব ছোট বয়সেই ছোট ছোট জিনিস মুখে দিতে চায়, যেগুলো গলায় আটকে যেতে পারে।
যদি বাচ্চাকে ফিডারে দুধ খাওয়ান তাহলে খাওয়ানোর সময় ফিডার ও বাচ্চা দুটিকেই ভাল করে ধরে থাকুন।
বোতাম, পয়সা এবং খেলনার বিভিন্ন অংশের মত ছোটখাট জিনিস বাচ্চার নাগালের বাইরে রাখুন।
বাচ্চাকে শক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করলে খাবার ছোট ছোট টুকরো করে তার মুখে দিন। আঙ্গুরের মত ছোট জিনিসও শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে।
এক বছরের কম বয়েসি শিশুকে বালিশ বা লেপ দিবেন না। এগুলতে চাপা পরে শিশুর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে হয়ত বালিশ চাপা পড়লে তা ঠেলে সরাতেও পারবে না।
শ্বাসরোধ হওয়া ঠেকাতে
বাচ্চার জামাকাপড়ের সাথে চুষনি (dummy) বেধে দিবেন না, কারন সেটি বাঁধবার ফিতা গলায় চেপে বসে বাচ্চার শ্বাসরোধ করতে পারে।
ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ
২ ইঞ্চি গভীর পানিতেও বাচ্চারা ডুবে যেতে পারে। ডুবে গেলে কোন শব্দও হয়না, তাই আপনি হয়ত ছটফট করার আওয়াজও শুনতে পাবেন না।
গোসলের দেয়ার সময় প্রতিটি মুহূর্ত বাচ্চার সঙ্গে থাকুন। এসময় এক মুহূর্তের জন্যেও তাকে ছেড়ে যাবেন না, এমন কি তার সাথে তার বড় ভাইবোন গোসলখানায় থাকলেও না।
গোসলের চেয়ারে (bath seat) বসিয়ে গোসল করালে মনে রাখতে হবে যে এটি কোন নিরাপত্তা প্রদানকারী যন্ত্র নয়, অতএব তখনো সবসময় বাচ্চার সাথে থাকতে হবে।
বিষক্রিয়া থেকে বাঁচাতে
সব ধরনের ওষুধ তালা বন্ধ করে অথবা বাচ্চার দৃষ্টিসীমা ও নাগালের বাইরে অনেক উপরে কোথাও রাখুন।
পরিস্কার করার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্য (ডেটল, হারপিক) নাগালের বাইরে রাখুন। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে যেখানে রাখবেন সেখানে তালা বা লক লাগিয়ে নিন। যেসব পরিস্কারক দ্রব্যে তিতকুটে ভাব আছে সেগুলো ব্যবহার করুন, এতে বাচ্চার হাতে পড়লেও সে সেগুলো গিলতে চাইবে না।
যখন ব্যবহার করবেন না, তখন বোতল বা জারের মুখ যেন ভালোভাবে লাগানো থাকে তা নিশ্চিত করুন।
আরও তথ্য জানতে এই লিংকগুলোতে যান
আপনার শিশু দুর্ঘটনার শিকার হলে কি করবেন
শিশুর দম আটকে গেলে কিভাবে সাহায্য করবেন